গুরুদাসপুরে কৃষক রোপা আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন তবে তাদের মাথায় চাষ ও সেচের বাড়তি খরচের বোঝা
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের আনন্দ নগর মহল্লার প্রান্তিক কৃষক মোতালেব মোল্লা। তিনি তার ৩ বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান চাষ করছেন। সম্প্রতি ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারনে তার ধান উৎপাদনে হালচাষে ৫০০ টাকা আর সেচযন্ত্রের (শ্যালো) জ¦ালানী ডিজেল খরচ বাবদ বাড়ছে ১ হাজার ২০ টাকা। অর্থাৎ হাল চাষ ও সেচ যন্ত্রের খরচ বাবদ তাকে বাড়তি ১ হাজার ৫২০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হবে। বাড়তি খরচে উৎপাদন ব্যহত হবার আশংকায় রয়েছেন তার মতো এলাকার সব কৃষক।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা গেছে,চলতি মৌসুমে রোপা আমনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৬০০২ হেক্টর। এ মৌসুমে অধিকাংশ কৃষক মোটা ধান বিআর ২৯,বিনা ৭,স্বর্না ও গুটি স্বর্নার আবাদ করছেন। এ পর্যন্ত ৭০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন সম্পন্ন করেছেন। অবশিষ্ট জমিতে কৃষকরা রোপনের প্রস্তুতি চলমান রেখেছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে রোপা আমন ধান উৎপাদনে তাদের খরচ হয় ১৬ হাজার টাকা। এরমধ্যে বিজতলা ৫শ,চাষ খরচ ১ হাজার ৫০০,সেচযন্ত্র ভাড়া ১ হাজার,ডিজেল খরচ ৩ হাজার ৫০০,রোপন শ্রমিক খরচ ১ হাজার ৫০০,সার ৩ হাজার,বালাই নাশক ১ হাজার ৫০০,নিরানী ১হাজার ও কাটা মাড়াই ২ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়।
গুরুদাসপুর পৌরসদরের আনন্দনগর মহল্লার মকছেদ শেখ,দেলবর প্রাং,মইনুল,মোতালেব,রাহেন সর্দারসহ অনন্ত ১০ জন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে,এক বিঘা জমি চারা রোপণ উপযোগী করতে তিন চাষের জন্য পাওয়ার টিলার ভাড়া (ডিজেল চালিত চাষযন্ত্র) মালিকদের আগে দিতে হতো ১হাজার টাকা। ডিজেলের দাম বাড়ায় মালিকরা খরচ বাড়িয়ে নিচ্ছেন ১ হাজার ৫০০টাকা। শুধু চাষেই তাদের খরচ বাড়ছে ৫০০ টাকা।
কৃষকরা জানান, এক বিঘা ধান উৎপাদনে সেচের জন্য জমি বিশেষে গড়ে ৩০ লিটার ডিজেল প্রয়োজন হয়। আগে ৮০ টাকা লিটার হিসাবে ৩০ লিটার ডিজেলের দাম ছিলো ২ হাজার ৪০০ টাকা। বর্তমানে তাদের সমপরিমান ডিজেল কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকা লিটার হিসাবে ৩ হাজার ৪২০ টাকায়। এতে প্রতি বিঘায় তাদের সেচ বাবদ ১ হাজার ২০ টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে।
আনন্দ নগর গ্রামের কৃষক মোস্তফা বলেন, তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় আমাদের চাষ ও সেচ খরচ বাবদ প্রায় ১ হাজার ৫০০ টাকা বেড়েছে। ক’দিন আগে বেড়েছে সারের দাম। এঅবস্থায় আমাদের চাষাবাদে খরচের বোঝা বাড়ছেই। এ মৌসুমে প্রতি বিঘায় গড়ে ১৬ মন ধান উৎপাদন হতে পারে। প্রতিমন ধানের বাজার মুল্য ১ হাজার টাকা হিসাবে ১৬ হাজার টাকা বিক্রি হতে পারে। আর ধান উৎপাদন খরচ হবে প্রায় ১৬ হাজার টাকা। হিসাব কষলে কৃষিকাজে লাভ করা দুস্কর।
চাষ দেওয়া পাওয়ার টিলার (চাষ যন্ত্র) মালিক এনামুল,রাশিদুল,রেজাউল বলেন, কয়েকদিন আগেও ডিজেল ৮০ টাকা লিটার কিনে হালচাষ দিয়েছি। কিন্তু সেই ডিজেল বর্তমানে কিনতে হচ্ছে ১১৪ টাকায়। বাধ্য হয়ে চাষ খরচও বাড়িয়েছেন তারা।
ডিজেল চালিত শ্যালো (সেচযন্ত্র) মালিক ইয়ারুল মোল্লা,আলাল প্রাং,এবাদ আলী বলেন,তারা আগের দামেই অর্থাৎ প্রতি বিঘায় সেচ বাবদ কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ভাড়া নিচ্ছেন। সেচ নিতে কৃষককেই ডিজেল কিনতে হয়। সেক্ষেত্রে ডিজেলের দাম বাড়ায় তাদের ফসল উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনর রশিদ বলেন,জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় চাষ ও সেচের জন্য কৃষকদের বাড়তি খরচ গুনতে হবে। কৃষকদের যে কোন সমস্যা সমাধান ও পরামর্শ দিতে উপজেলা কৃষি বিভাগ সর্বদা কৃষকের পাশে রয়েছেন। উৎপাদন খরচ বাড়লেও ফসলের দাম থাকায় কৃষকরা লাভবান হবেন বলেও জানান তিনি।#
বাংলাদেশ সময়: ৫:২০ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৯ আগস্ট ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain