পাঞ্জাবী টুপি পরিহিত (মাঝে)ছেলে আব্দুল মোতালেব
মা আমেনা বেগম(১১০)অযত্ন অবহেলা আর বয়সের ভাড়ে মৃতপ্রায়। স্বামী ওসমান মোল্লা তাঁকে ফেলে পরপারে চলে গেছে অনেক আগেই। এক সন্তান আর এক মেয়ে নিয়ে ভালোই দিন কাটছিলো আমেনার। মাঝে মেয়ে হাজেরা খাতুনও তাকে রেখে চলে যান ওপারে। একমাত্র ছেলে মেতালেব (৭০) বিয়ে করে স্বশুড় বাড়ি পাড়ি জমান। ব্যবসা করে অট্রালিকা ও কোটি টাকার মালিক হলেও ছেলের বিশাল অট্টালিকায় ঠাঁই হয়নি আমেনা খাতুনের।
নিরুপায় আমেনা আশ্রয় নেন নাতনি রমেছার(৪৫)গৃহে। তাঁরও অভাব অনটনের সংসার। শতবর্ষী আমেনা খাতুনের দিনরাত কাটে ঘরের বাইরের পলিথিনে ঘেরা একটি চিলেকোঠায়। সেখানে নেই কোনো চৌকি। নেই বিছানা বা বালিশ! শুয়ে থেকে একমাত্র ছেলেকে একনজর দেখার জন্য আহাজারি করছেন এই বৃদ্ধা। লোক মাধ্যমে মায়ের চিৎকার ছেলের কান পর্যন্ত পৌঁছালেও কোনো ভ্রুক্ষেপ করেননি আব্দুল মোতালেব।
পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের চর এনায়েতপুর গ্রামে আমেনা বেওয়ার বাড়ি হলেও একমাত্র ছেলে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাচকৈড় এলাকায় বসবাস করেন। ওষুধ ব্যবসায়ী আব্দুল মোতালেব দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময়ধরে মায়ের কোনো খোঁজ রাখেন না। এমনকি মায়ের মুখ পর্যন্ত দেখেননি!
এমন অমানবিক বিষয়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)শ্রাবনী রায়ের নজরে আসে।সোমবার(১০জুলাই) তিনি বৃদ্ধার ছেলে আব্দুল মোতালেব তাঁর কার্যালয়ে ডেকে রাষ্ট্রীয়,ধর্মীয় এবং মানবিক বিষয়ে বুঝিয়ে মায়ের দায়িত্ব নেবার কথা বলেন। পরে ছেলে ইউএনও শ্রাবনী রায়ের নির্দেশে মায়ের দায়িত্ব নিতে রাজি হন।
মঙ্গলবার(১১ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ছেলে আব্দুল মোতালেব তাঁর মায়ের সাথে দেখা করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছাইকোলা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান নুরু। তিনি জানান,মায়ের প্রতি ছেলের এমন অমানবিক বিষয় তিনি জানতেন না। সংবাদপত্রের রিপোর্টের মাধ্যমে তিনি বিষয়টি অবগত হন। ইউএনও’র মধ্যাস্থতায় মায়ের কাছে ফেরা অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এসময় ছেলে আব্দুল মোতালেব,নাতনি রমেছা বেগম,সাংবাদিক পবিত্র তালুকদার,ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান,স্কুল শিক্ষক ইসাহাক আলী,ডাক্তার শফিকুল ইসলাম,প্রতিবেশী শহিদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আব্দুল মোতালেব জানান,ইউএনও স্যারের কথায় তার ভুল ভেঙ্গেছে। মায়ের সাথে এমন আচরণের জন্য তিনি অনুতপ্ত। এখন থেকে মায়ের সকল দায়িত্ব তিনি পালন করবেন এবং দু-একদিনের মধ্যেই পরিবারের সকল সদস্য নিয়ে মায়ের সাথে দেখা করবেন বলেও জানান তিনি।
নাতনি রমেছা বেগম বলেন, মামা নানির কাছে ফিরেছেন এতেই তিনি খুশি। মরার আগে নানি তার ছেলের মুখ দেখেছেন এখন তিনি মরে গেলেও শান্তি পাবেন।
উল্লেখ্য-বৃদ্ধার একমাত্র মেয়ে হাজেরা বিয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই মারা যান। তবে রেখে যান ছয় মাস বয়সি কন্যাসন্তান রমেছা খাতুনকে। নানা-নানির কাছেই বড় হতে থাকে নাতনি রমেছা খাতুন। এদিকে নাতনী রমেছা খাতুনকে নানা ওসমান মোল্লা ১০ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করে দেন। এতেই বাধে বিপত্তি! এই দশ শতক জায়গা ভাগনিকে দেওয়ায় বাবার ওপর ক্ষুদ্ধ হয়ে ছেলে মোতালেব গুরুদাসপুর পৌর এলাকার চাঁচকৈড় বিয়ে করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। একারনে মায়ের কোন খোঁজ খবর রাখেননি।
বাংলাদেশ সময়: ৫:২২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০২৩
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain