ক’দিন আগেও বাড়ির পাশের মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাসে ফেরি করে ভাজাবাদাম বিক্রি করতেন রাজু(২৭)। সনাতন পদ্ধতিতে কড়াইয়ে বালি দিয়ে বাদাম ভাজা ছিলো কষ্টকর,ব্যায়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। কমসময়ে একসাথে অনেকগুলো বাদাম কিভাবে ভাজা যায় সেই চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে রাজুর। রাস্তার পাশে মিক্সার যন্ত্র সিমেন্ট,খোয়া ও বালির মিশ্রন প্রক্রিয়া দেখে হঠাৎ সেই যন্ত্রের আদলে বাদামভাজা যন্ত্র তৈরীর পরিকল্পনা মাথায় আসে তার। পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন। নিজের উদ্ভাবিত বাদামভাজা যন্ত্রে সংসারে সচ্ছলতা ফিরেছে রাজুর। তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা। রাজু নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দার কাছিকাটা গ্রামের মৃত রবিউল করিমের ছেলে।
সরোজমিনে গেলে দেখা যায়,রাস্তার পাশে তৈরী ঘরে ভাজা বাদাম থেকে বালি ঝড়াচ্ছেন রাজু। এ কাজে তাকে সহযোগীতা করছেন শ্রমিক সজিব। পাশে ৮ ফিট দৈর্ঘের গোলাকৃতি লোহার তাওয়ার মধ্যে বাদাম ও বালির মিশ্রন একটি বৈদ্যুতিক মটোরের সাহায্যে ঘুরানো হচ্ছে। তার নিচে কাঠ খড়ির জ্বালানী দিয়ে দেয়া হচ্ছে তাপ। ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মধ্যে কাঁচা বাদাম ভাজা হলে নামিয়ে বালি পৃথক করা হয়। এরপর অন্যস্থানে বিক্রি উপযোগী ভাজাবাদাম স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।
দুই সন্তানের জনক উদ্যোক্তা রাজু জানান, তার উদ্ভাবিত যন্ত্র তৈরী করতে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। এ যন্ত্রের সাহায্যে ২০ মিনিটে ৫০ থেকে ৬০ কেজি বাদাম ভাজা যায়। দৈনিক প্রায় ৩শ কেজি ভাজা বাদাম তিনি নিজ উপজেলা ছাড়াও পাশের বড়াইগ্রাম,তাড়াশ,চাটমোহর,উল্লাপাড়ায় পাইকারী বিক্রি করেন। কাঁচাবাদাম নাটোরের লালপুর, নওগাঁর আত্রাই,পাবনার বেড়া থেকে সংগ্রহ করেন বলে জানান তিনি।
এক কেজি ভাজা বাদাম বিক্রি করে লাভ থাকে ৮ থেকে ১০ টাকা। এতে তার মাসিক আয় ৭০ থেকে ৯০ হাজার টাকা। শ্রমিক,বিদ্যুৎবিল,জ্বালানী খরচ বাদে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসিক নিট আয় বলে জানান ওই তরুন উদ্যোক্তা। এ উপার্জনে সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরেছে।
তিনি আরো জানান,ছোটবেলায় বাবা মারা যাওয়ার কারনে টাকার অভাবে লেখাপড়া করতে পারিনি। কিন্তু ছোট থেকেই উপার্জনের জন্য অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। এক যন্ত্র তার সংসারের অভাব ঘুচিয়ে সচ্ছলতা ফিরিয়েছে। ব্যবসার প্রসার ঘটানোা জন্য সরকারী সহায়তা চান তরুন উদ্যোক্তা রাজু।
এ কাজে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক সজিব জানান,তিনি এখানে দৈনিক ৫০০ টাকা হাজিরায় ৬ মাস ধরে কাজ করছেন। এ টাকায় তার সংসারেও স্বচ্ছলতা ফিরেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা বুলবুল হোসেন জানান,এমন যন্ত্র এর আগে কোথাও তিনি দেখেন নি। প্রতিদিন অনেক বেকার যুবক রাজুর উদ্বাবিত বাদাম ভাজা যন্ত্র দেখতে আসে। এলাকার একজন নিরক্ষর উদ্যোক্তার এমন অবিস্কারে তিনি গর্বিত।
মশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী জানান,রাজু একজন কর্মঠ মানুষ। তার এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তিনি বেকার যুবকদের অনুকরনীয়। বেকার যুবকদের চাকরীর পেছনে না ঘুরে উদ্যোক্তা হবার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১২:৩৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain