হঠাৎ করে দেশজুড়ে তীব্র হয়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। মূলত গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কমে যাওয়ার কারনে বেড়েছে ভোগান্তি। গ্যাস সরবরাহ বাড়লেই শুধু লোডশেডিং থেকে মুক্তি মিলবে। এমনটাই জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে শিগগির জ্বালানি তেল ও এলএনজির দাম কমার সম্ভাবনা নেই। বরং ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাবে আগামীতে দাম বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে। গ্যাসের সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছেন।
তিন-চারদিন ধরে দেশে বিদ্যুতের লোডশেডিং বেড়ে গেছে বহুগুন। যা সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যায়নি। দেশের অনেক এলাকায় দিনের ৮-১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। কারণ হিসেবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি বলছে,পেট্রোবাংলা তাদের গ্যাস কম দিচ্ছে,এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। আবার জ্বালানির দাম বেশি বলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রও পুরোদমে উৎপাদনে যেতে পারছে না। এতে দেশজুড়ে ২ হাজার মেগাওয়াট ঘাটতি লোডশেডিয়ের মাধ্যমে পুরেণ করতে হচ্ছে।
পেট্রোবাংলা বলছে, গত দুই সপ্তাহে গ্যাস সরবরাহ ৩০ শতাংশ কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় স্পট মার্কেট (খোলাবাজার) থেকে এলএনজি কিনছে না বাংলাদেশ। দাম না কমলে স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কেনা হবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। অন্যদিকে, সংকট কাটাতে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান।
সূত্র জানায়, এলএনজি সরবরাহ কমায় গ্যাস ঘাটতি বেড়েছে ৩০-৩৫ কোটি ঘনফুট। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রের উৎপাদন বৃদ্ধিতে যে উদ্যোগই নেওয়া হোক না কেন, তা কোনোভাবেই আগামী কয়েক মাসের চেষ্টায় ১০-১৫ কোটি ঘনফুট উৎপাদন বাড়বে না। ফলে চলমান গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট খুব শিগগিরই কাটবে না বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা। তাঁরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম কমলেই শুধু দেশের বিদ্যুৎ-গ্যাস পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে নসরুল হামিদ বলেন, ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প এই মুহূর্তে নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্বের অনেক দেশই জ্বালানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হয়েছে। বাংলাদেশকেও একই পথে যেতে হচ্ছে।
পিডিবির তথ্যমতে,সোমবার লোডশেডিং ২ হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। দেশের ৫৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড চাহিদার চেয়ে ৮০০-৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। ফলে গ্রাহকরা দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। গতকাল দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৫ হাজার মেগাওয়াট, পিডিবি সরবরাহ করেছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট।
গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় একদমই গ্যাস পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। কোনোরকমে রান্নার চুলা জ্বলছে শিল্পকারখানাও গ্যাসের অভাবে স্বাভাবিক উৎপাদন করতে পারছে না বলে অভিযোগ আসছে। গতকাল দেশে ৪৫০ কোটি ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে পেট্রোবাংলা গ্যাস সরবরাহ করেছে ২৮২ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে এলএনজি থেকে পাওয়া গেছে ৫০ কোটি ঘনফুট।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৫৯ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain