এক সন্তানের জননী হয়েই স্বামী নাজির উদ্দিনকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেন বিধবা মনোয়ারা বেগম। অনেক কষ্টে মেয়েটিকে বড় করে বিবাহ দেন প্রতি বেশী মমিনুলের সাথে। বিয়ের কিছু দিন না যেতেই মেয়েটির বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
একমাত্র মেয়ে মঞ্জুয়ারা হেলেনকে নিয়ে বিপাকে পরেন তিনি। যন্ত্রনা আর কষ্টের মাঝেও ভেঙ্গে পরেননি । সমাজের সকল সমালোচকদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করে চাকুরী দেন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু ওই সুখ আর বেশী দিন সয়নি বিধবার কপালে। মেয়ে জামাই মমিনুলের হাতেই খুন হলেন মেয়ে মঞ্জুয়ারা। এখন এক মাত্র নাতনি মিতুকে ঘিরেই যেন তার বেঁচে থাকার স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটাকে নিয়েও যেন চিন্তার শেষ নেই তার ।
উচ্চ আদালত থেকে মমিনুল জামিনে এসেই মেয়ে হেলেন হত্যা মামলার এক মাত্র সাক্ষী নাতনি মিতুকে মেরেফেলার হুমকি দিচ্ছে প্রকাশ্যেই। এভাবেই কষ্টগুলো প্রকাশ করলেন ৬২ বছরের বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগম। নিহত মঞ্জুয়ারা গুপিনাথপুর দক্ষিনপাড়া গ্রামের মৃত নাজির উদ্দিনের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, একই গ্রামের ডা. মো.মনছের আলীর ছেলে মমিন (৪৮) এর সাথে ২৫ বছর পুর্বে ক্লাস সেভেনে পড়া অবস্থায় ওই শিক্ষিকা মঞ্জুয়ারার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের দুই বছরের মাথায় নবম শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এর পর বহু কষ্টে লেখাপড়া শেষ করে ৪ জানুয়ারী ২০১০ সালে বৃ-কাশো সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
তার একমাত্র মেয়ে নবম শ্রেণীতে স্থানীয় এক মাদ্রাসায় লেখাপড়া কালিন তার বাবার কাছেই থাকতো। আর শিক্ষিকা মুঞ্জুয়ারা তার বুদ্ধা মাকে নিয়ে নিজ বাড়ীতেই থাকতেন। তিন বছর আগে এই দিনেই হেলেনকে কুপিয়ে হত্যা করেন স্বামী মমিনুল। বর্তমানে মেয়েটি তার বৃদ্ধা নানী এই মামলার বাদী মনোয়ারার কাছেই রয়েছেন।
ঘটনার রাতে তিনি বৃদ্ধা মাতাকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমাচ্ছিলেন। তখন মুষলধারে বৃষ্টিও হচ্ছিল। দুর্বৃত্তরা ওই সুযোগে বাড়ীর ভেতরে প্রবেশ করে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে হত্যা করে বাড়ির পাশেই পুকুরে ফেলে রেখে যায়। কি কারনে তাকে হত্যা করা হয়েছে এর রহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। তবে এব্যাপারে মামিনুলের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা এক আত্বীয় তাকে সাহায্য করছে বলে এলাকাবাসী জানান।
নিহত হেলনের একমাত্র মেয়ে কলেজ শিক্ষার্থী মিতু জানায়, আমার মা যখন খুন হন। তখন আমি বাবার কাছেই থাকতাম। ঘটনার রাতে বাবা বাসায় ফিরে প্রথমে রক্তমাখা শরীরটা পরিস্কার করে পশুর জন্য রান্না করা খাবার খেতে থাকে। তার অস্বাভাবিক আচরণ দেখে জিজ্ঞাসা করি বাবা তোমার কি হয়েছে।
বলে কই কিছু হয়নী তো। তাহলে তোমার গায়ে রক্ত কেন আর তুমি গরুর রান্না খাবার খাচ্ছ কেন? কথা শেষ না হতেই নানী এসে চিৎকার দিয়ে বলে মিতু তোর বাবা তোর মাকে মেরে পালিয়েছে। তখন বাবা নামের ওই পশুটা রুমের মধ্যে গিয়ে পালায়। আমি গিয়ে জিজ্ঞাসা করতেই আমার পা জরিয়ে ধরে বলে আমাকে বাঁচা মা। তখনই আমি ওই বাবা নামক পশুটির বাড়ী থেকে বের হয়ে নানীর কাছে চলে আসি। তখন থেকেই নানীর সাথে অন্যের বাড়ীতে আশ্রয় নিয়ে আছি।
মিতু বলেন মামলাটির কোন অগ্রগতি না হওয়ায় সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে থানা থেকে মামলাটি প্রতাহার করে ডি.আই.জি রাজশাহী রেঞ্জ গোয়েন্দা সংস্থায় নেওয়া হয় । মামলার প্রধান আসামী মমিনুল ইসলাম উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতেই আছেন দুই বছর যাবত। বাঁকী আসামী একই গ্রামের হুকুম দাতা মনছুর রহমান,মোস্তফার ছেলে আহসান,আকবরের ছেলে হামজাও জামিনে রয়েছে।
মামলার বাদি মোনোয়ারা বেগম জানান, আজ মেয়ে হত্যার তিন বছর পুর্ণ হলো । জানি না আর কতো দিনে মেয়ে হত্যার বিচার পাবো । বিচারটা দেখেই যেন মরতে পারি।
মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাটোরের পিআইবি ইন্সপেক্টর নাছির হোসেন জানান, মামলাটির প্রতিবেদ হেড কোয়ার্টারে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে আসলেই পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করা হবে। সামনের সপ্তাহের পরে একটা ভালো খবর দিতে পারবো ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ সময়: ১১:০২ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৭ আগস্ট ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain