চলনবিলে নিষিদ্ধ চায়না জালের ব্যবহারে বিলুপ্তির পথে দেশীয় মাছ
চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের গুরুদাসপুরে বর্ষার নতুন পানি প্রবেশ করেছে। নতুন পানির সাথে দেশীয় প্রজাতির মাছের আনাগোনা বেড়েছে। এ মৌসুমে দেশীয় মা মাছ ডিম ছাড়ে। মৎস বিভাগের উদাসীনতায় একশ্রেনীর অসাধু জেলে নিষিদ্ধ কারেন্ট,বাদাই ও চায়না জাল দিয়ে দেশীয় প্রজাতির ডিমওয়ালা মাসহ ছোট মাছ নিধন করছে। এতে অস্তিত্ব সংকটে দেশীয় মাছ।
খোজ নিয়ে জানাগেছে, উপজেলার চলনবিলাঞ্চল ছাড়াও হাড়িভাঙ্গা,চাকলবিল.দিগদাড়িয়া,কাশিয়ার বাতা,জোলাগাড়িসহ অন্যান্য বিলে নিষিদ্ধ কারেন্ট,বাদাই ও চায়না জালে মাছ ধরা হচ্ছে। অভিনব পদ্ধতিতে তৈরি এসব জালে ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ নিধন হচ্ছে। মাছের সাথে ওই জালগুলোতে আটকা পরছে কাঁকড়া,সাপ,কুচিয়া,ব্যাঙসহ জলজ প্রানী। এতে জীব-বৈচিত্র্য হুমকিতে রয়েছে।
চায়না জাল হচ্ছে ১ থেকে দেড় ফুট প্রস্থ, ৪০ থেকে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ক্ষুদ্র ফাঁসবিশিষ্ট একপ্রকার ফাঁদ। গোলাকার লোহা রিং দিয়ে বাদ্যযন্ত্র ঢোল আকৃতি ও মাঝে মাঝে চতুর্ভুজ আকারের লোহার দন্ড দিয়ে তৈরি বিশেষ ফাঁদ। একটি জালে ৪০ থেকে ৫০টি করে ফাঁদ থাকে। এই জালের ক্ষুদ্র ফাঁসের কারণে ছোট বড় সব ধরণের মাছ ও জলজপ্রানী ভিতরে প্রবেশ করলে আর বের হতে পারে না। অসাধু জেলে,সৌখিন মাছ শিকারী,মৎস্য ব্যবসায়ীরা খাল,বিলে,নদীতে নিষিদ্ধ ওই জাল দিয়ে মাছ ধরায় প্রতিযোগীতায় মত্ত। ফলে এই অঞ্চলের প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত মৎস্য সম্পদ বিলুপ্তির আশংকা রয়েছে।
চাঁচকৈড় খলিফা পাড়া মহল্লার সৌখিন মাছ শিকারী রমজান আলী (ছদ্দনাম) জানান, বন্যার পানি আসার আগে তিনি ৪ হাজার টাকা দিয়ে একটি চায়না জাল কিনেছেন। গড়ে প্রতিদিন তিনি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার দেশীয় মাছ ধরছেন।
বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আকবর আলী বলেন, নিষিদ্ধ এ জালের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় মাছের স্বাভাবিক প্রজনন,বংশ বিস্তার ও বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে। এতে উন্মক্ত জলাশয়ে মাছের প্রাচুর্য্য কমছে আশংকাজনকভাবে। এসব জালের ব্যবহার বন্ধ করা না গেলে দেশের মৎস্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলে মাছের খড়া দেখা দেবে।
গুরুদাসপুর পৌরসদর চাঁচকৈড় বাজারের ব্যবসায়ী ফারুক হোসেন বলেন, দেশীয় মাছের শত্রু হলো চায়না,বাদাই ও কারেন্ট জাল। ওই জালে পোনাসহ সব ধরনের মাছ ও জলজ প্রানী আটকা পরে। মৎস বিভাগের নজরদারি না বাড়ালে অচিরেই আগামী প্রজন্ম মাছ কাগজ-কলমে দেখবে বাস্তবে নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার দাবী তার।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মোবাশ্বির হোসেন বলেন, এ সর্বনাশা নিষিদ্ধ চায়না জাল ব্যবহার বন্ধে আমরা সচেতনামূলক প্রচারাভিযানসহ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। আইন অমান্য বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২:৪৩ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ২৩ জুন ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain