নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহপাঠিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে ক্ষুদে ডাক্তারদল
সোমবার সকাল ১১টার দিকে মশিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। টেবিল-চেয়ার নিয়ে আলাদা আলাদা স্থানে বেশ ক’জন ডাক্তার বসে আছে। একজন এক এক করে শিক্ষার্থীদের ডাকছে। এরপর নাম লিখে ওজন,আই ভিশন ও উচ্চতা মাপা হচ্ছে। আর সামগ্রীক বিষয় তদারকি করছেন একজন শিক্ষক।
গায়ে সাদা অ্যাপ্রোন। সহপাঠীদের ওজন,চোখের ভিশন পরীক্ষা ও উচ্চতা পরিমাপ করে খাতায় লিপিবদ্ধ করছে ‘খুদে ডাক্তার’ দল। শিক্ষার্থীরা শৃঙ্খলার সাথে শ্রেণী ডাক্তারদের নিকট স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাচ্ছেন। এমন দৃশ্য নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। ওই বিদ্যালয়ের ১৮ জন খুদে ডাক্তার দল দিয়ে চলছে ৪১৮ শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্যপরীক্ষা।
বিদ্যালয়সুত্রে জানাগেছে প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের নির্দেশনানুসারে স্কুলের ক্ষুদে ডাক্তার নির্বাচন ও তাদের মাধ্যমে সকল শিক্ষার্থীদের বছরে দুইবার স্বাস্থ্যপরীক্ষা করছেন তারা। ক্ষুদে এই ডাক্তারের দল শিক্ষার্থীদের ওজন, উচ্চতা ও দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা করে অস্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধি,দৃষ্টি শক্তির ত্রæটিসহ নানা বিষয় গাইড শিক্ষকদের নজরে আনবেন। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে কৃমিনাশক বড়ি খাওয়ানো,ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও ক্ষুদে ডাক্তার দলটি অংশ গ্রহন করে।
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ‘খুদে ডাক্তার’ কর্মসূচি আওতায় প্রতিটি বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণির প্রতি ক্লাস থেকে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে বাছাই করে একটি দল গঠন করা হয়। তারাই ‘খুদে ডাক্তার’ নামে পরিচিত।
মশিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে ডাক্তার দলের গাইড শিক্ষক গোলাম মোস্তফা ভুলু জানান, গত রবিবার থেকে বিদ্যাালয়ে এই কর্মসূচি শুরু হলেও চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। চলমান এ কার্যক্রমে ১৮ জন ক্ষুদে ডাক্তার শিক্ষকসহ ৪১৮ জন শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। এ কাজে তারা বেশ মজা পাচ্ছে। এ কাজের মাধ্যমে অনেকেই ভবিষ্যতে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে।
মশিন্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মমতা সুলতানা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খুদে ডাক্তারের দল গঠন এবং তাদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সরকারের একটি একটি অভিনব কার্যক্রম। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দলগতভাবে কাজ করা,সুশৃঙ্খল ভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবে। তালিকায় যেসব শিক্ষার্থীর উচ্চতা অনুসারে ওজন কম বা অস্বাভাবিক,যাদের দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা রয়েছে, তাদের অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে বিষয়টি জানানো এবং প্রতিকারের দিকনির্দেশনা দেয়া হবে।
ওই বিদ্যালয়ের ক্ষুদে ডাক্তার কারিমা,সাদিয়া,মিম,আল্পনা,সামিয়া বলেন,ক্ষুদে ডাক্তারের দায়িত্ব পালন করতে তাদের ভালো লাগছে। তারা ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়েই মানুষের সেবা করতে চায়।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন,সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,এবতেদায়ী মাদরাসা,কিন্ডার গার্টেনসহ প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরকারের এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে অসুস্থ, পুষ্টিহীন ও দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা থাকা শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করে তাদের অভিভাবকের ডেকে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এটি সরকারের একটি প্রশংসিত উদ্যোগ।
বাংলাদেশ সময়: ৬:৩০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ আগস্ট ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain