১৫ বছর আগে অসুখে কর্মহীন হয়ে পরেন দরিদ্র মতিউর(৬৫)। সংসার চালানো দায়। অন্যের থেকে ধার-দেনা করে কিনেন একটি ছাগল(পাঠা)। সেটি প্রজনন উপযোগী হলে তাকে দিয়ে বানিজ্যিকভাবে প্রজনন করিয়ে আয় শুরু হয় তাঁর। ক’বছরে অভাব দুরে ঠেলে ঘুরিয়েছেন নিজের ভাগ্যের চাকা। এখন তার বানিজ্যিক ছাগল প্রজনন খামার থেকে মাসে আয় ৩০ হাজার টাকা।
নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের আনন্দ নগর মহল্লার বাসিন্দা মতিউর রহমান মতি একজন সফল খামারী। তাঁর প্রজনন খামারে হরিয়ান,তোতাপুরী,ব্রিটল এবং হরিয়াল ও তোতাপুরী ক্রস জাত মিলিয়ে ৭টি ছাগল রয়েছে। প্রতিটি ছাগলের গড়মুল্য ৬০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে তার খামারে ৪ লাখ টাকার ছাগল রয়েছে। এগুলো রাজশাহী,পাবনা,নাটোরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করেছেন। উপজেলা প্রানী সম্পদ প্রদর্শনীতে ছাগল শ্রেনীতে একাধিকবার প্রথমস্থান অর্জন করেছেন মতি।
সরোজমিনে বৃহস্পতিবার সকাল ৯ টার দিকে মতির খামারে গিয়ে দেখা গেছে ছাগলগুলো পরিচর্যা করছেন। তিনি বলেন,তার ছাগল প্রজনন খামারে ওষুধ,খাবার পরিচর্যা বাবদ প্রতিমাসে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। খড় কুচি,সবুজ ঘাস,গম ও ছোলার ভূষি খাইয়ে ছাগলগুলো লালন-পালন করেন তিনি। এ খামার থেকে প্রতিমাসে আয় ৩৫ হাজার টাকা। ছাগলের (পাঠার) শ্রেনীভেদ অনুসারে প্রতিটি ছাগল প্রজনন করিয়ে নেন ৩শ থেকে ৫শ টাকা। শুধু প্রজনন থেকেই তার মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে এ খামার থেকে তার মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা।
শুধু প্রজননই নয়,ছাগল মোটাতাজা করে বিক্রিও করেন খামারী মতিউর। তিনি বলেন, সংসারের অভাব ঘোচাতে একটা ছাগল দিয়ে শুরু করে ছিলাম। বর্তমানে হরিয়ানা, তোতাপারি, ব্রিটল জাতের বিদেশি ৭টি ছাগল ও একটি ষাড় গরু তার খামারে। একসময় অভাবী সংসারে খাবার জুটতো না, এখন স্বাবলম্বী তিনি। তবে পুজির অভাবে খামার বড় করতে পারছেন না তিনি। সরকারী সহযোগীতা দাবী করেন ওই খামারী।
খামারী মতির প্রতিবেশী রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজের শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন, উপজেলা প্রানীসম্পদ অফিসে ছাগলের কৃত্তিম প্রজননের ব্যবস্থা না থাকায় এলাকার ছাগল পালনকারীদের মতির সনাতন প্রজননই একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন পাশর্^বর্তি গ্রাম থেকে ৪ থেকে ৫টি ছাগল প্রজনন করতে আসে ওই খামারে। প্রজনন ছাগলের শরীরের বেশ দুর্গন্ধ। এ কারনে অনেকে এমন খামার বিমুখ হলেও মতিউর প্রতিকুলতা জয় করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তাকে অনুসরন করে গ্রামে আরও দুটি প্রজনন খামার গড়ে উঠেছে।
ছাগল প্রজনন করাতে এসেছেন সাহাপুর গ্রামের সোহাগ মোল্লা। তিনি বলেন,এ খামারে প্রজনন করাতে ৩শ থেকে ৫শ টাকা খরচ হয়। খরচ একটু বেশি হলেও সে খুশি,কারন আগামীতে ভালোমানের ছাগলের বাচ্চা পাওয়া যায়। সরকারীভাবে গরুর মতো ছাগলের কৃত্তিম প্রজনন ব্যবস্থার দাবী করেন তিনি।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: আলমগীর হোসেন বলেন, মতিউর ছাগলের প্রজননের ব্যাতিক্রমি খামারটি তিনি পরিদর্শন করেছেন। তিনি একজন সফল খামারী। তরুন উদ্যোক্তাদের জন্য তিনি দৃষ্টান্ত হতে পারেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগ সব সময় এ খামারীর পাশে থেকে চিকিৎসাসহ সবরকম পরামর্শ ও সহযোগী করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain