গুরুদাসপুর পৌর সদরের খলিফা পাড়ার আব্দুল কুদ্দুস(৫৫) ও পার-গুরুদাসপুর মহল্লার আব্দুর রাজ্জাক (৬০) দু’বন্ধুর ভ্রাম্যমাণ হাঁসের খামার।
বর্ষা মৌসুমে চলনবিল থাকে জলে টইটুম্বর। আগষ্ট-সেপ্টেম্বর মাসে সে জল কমতে থাকে। এসময় ছোটমাছ,ব্যাঙ,শামুক,ঝিনুকসহ নানা প্রাকৃতিক জলজপ্রানীর বিচরণ বেড়ে যায়। জল ও প্রাকৃতিক খাবারকে উপলক্ষ করে চলনবিল তখন হাঁস পালনের উপযোগী চারনভুমিতে পরিনত হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গুরুদাসপুর উপজেলার রুহাই ও কুন্দইলের মাঝের বিলে গড়ে উঠেছে বড় একটি হাঁসের খামার। সেই হাসের খামারে বদলেছে দুই বন্ধুর ভাগ্য।
গুরুদাসপুর পৌর সদরের খলিফা পাড়ার আব্দুল কুদ্দুস(৫৫) ও পার-গুরুদাসপুর মহল্লার আব্দুর রাজ্জাক (৬০) দু’বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছেন একটি ভ্রাম্যমাণ হাঁসের খামার। সারাদিন হাঁসগুলো চলনবিলের প্রাকৃতিক খাবার খায়। সন্ধ্যায় সেগুলোকে শুকনো স্থানে রেখে পরিচর্যা শেষে পুনরায় সকালে বিলে উন্মুক্ত করা হয়। এক জায়গায় স্থির না রেখে পানি ও প্রাকৃতিক খাবারের প্রাপ্যতানুসারে স্থানান্তর করা হয় খামারটি।
ভ্রাম্যমাণ খামারটি একদিকে বদলে দিয়েছে দুই বন্ধুর ভাগ্য অন্যদিকে এলাকাবাসী
পেয়েছে স্বাবলম্বী হওয়ার প্রেরণা। আব্দুর রাজ্জাক জানান,‘ছোট পরিসরে বেশ ক’বছর ধরেই তাঁর নদীতীরবর্তি বাড়িতে তিনি হাঁস পালন করছিলেন। খামারের লাভের বিষয়টি বন্ধু কুদ্দুসকে জানালে দুজনের ৮ লাখ টাকার যৌথ পুঁজি দিয়ে বড় পরিসরে এ খামারটি করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁদের খামারে হাঁসের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০টি। এপ্রিল মাসের শুরুতে হাঁসের বাচ্চাগুলো কেনা হয়,এরা জুলাই মাসের মাঝামাঝি ডিম দেয়া শুরু করেছে। এখন গড়ে প্রতিদিন ১হাজার টি ডিম পাচ্ছেন তারা।’
খামারী আব্দুল কুদ্দুস জানান,‘তাদের খামারে ক্যামবেল,ব্ল্যাকহল ও বেলজিয়াম জাতের হাঁস রয়েছে। তারা ছাড়াও আর ৪ জন শ্রমিক হাঁসগুলোর দেখভাল করেন। চার শ্রমিকের মাসিক বেতন ৬০ হাজার টাকা। প্রাকৃতিক খাবার ছাড়াও বাড়তি খাবার হিসাবে মাসে ৯০ মন ধান খাচ্ছে। যারমুল্য ৯০ হাজার টাকা। ওষুধ ও অন্যান্য খরচ মাসে আরও ২০ হাজার টাকা। সবমিলিয়ে এ খামারে প্রতিমাসে খরচ ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
আব্দুল কুদ্দুস আরো জানান,সম্প্রতি অসুখে কিছু হাস ডিম দিচ্ছেনা। তার পরেও এখন গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ডিম পাচ্ছেন তারা। বাজারে চাহিদা থাকায় ডিমগুলো পাইকাররা খামার থেকে প্রতিটি ১৩ টাকা হিসাবে কিনে নিচ্ছেন। ডিম বিক্রি করে প্রতিদিন ১৩ হাজার হিসাবে মাসে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয় তাদের। খরচ বাদে প্রতিমাসে তাদের গড় আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। ৬ মাস পর্যন্ত হাসগুলো ডিম দেবে। পরে মাংস উপযোগী হাসগুলো বিক্রি করলেও লগ্নিকৃত টাকার চেয়েও অতিরিক্ত টাকা পাওয়া যাবে।
এ খামার দেখতে আসা চাঁচকৈড় বাজার পাড়ার আব্দুল মোতালেব ও খোয়ার পাড়া মহল্লার আবু তালেব বলেন,‘হাঁসের ডিম এবং হাঁস বিক্রির টাকায় অনেকেই নিজের ভাগ্য বদল করেছেন। দুই বন্ধুর খামার দেখে তার উৎসাহিত হয়েছেন। ভবিষ্যতে তাদের একটি হাঁসের খামার করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
গুরুদাসপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন,চলনবিলে ভ্রাম্যমান হাঁস পালনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই বন্ধুর হাঁসের খামারটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। হাঁসের খামারে অনেকেই বেকারত্ব দূর করেছেন। তার বিভাগ থেকে খামারীদের সরকারের নির্ধারিত মূল্যে ভ্যাকসিন.চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:১৫ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৯ আগস্ট ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain