দশম ও তৃতীয় শ্রেনীতে পড়ুয়া দুই সন্তানের জন্য খাতা কলম কিনতে এসেছেন অভিভাবক ফেরদৌস(৫০)। তিনি বলেন,‘আগে ১২০ পৃষ্ঠার ৩০ টাকার খাতার দাম বেড়েছে ৭ টাকা আর ১ ডজন ৪২ টাকার বল পয়েন্ট কলমে বেড়েছে ৮ টাকা। শুধু যে কলম,খাতার দাম বেড়েছে তা নয়,পাঠ্য বই,পেন্সিল,জ্যামেতি বক্স,ব্যবহারিক খাতা,রংপেন্সিল,স্কেল,দিস্তা খাতাসহ বেড়েছে সবধরনের শিক্ষা উপকরনের দাম। দিনমুজুর তিনি,তার আয় বাড়েনি। শিক্ষা উপকরনের দাম না কমালে সন্তানদের লেখা-পড়া করানো তার পক্ষে সম্ভব না।’ফেরদৌস নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের আনন্দ নগর মহল্লার বাসিন্দা।
দেশব্যাপী শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে নাটোরের গুরুদাসপুরেও। হঠাৎ করেই বই খাতা,কলম,পেন্সিলসহ সবধরনের স্টেশনারী সামগ্রীর দাম বেড়েছে। শিক্ষা উপকরণের এমন লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধিতে শঙ্কিত অভিভাবক মহল। দাম বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত সমাজের উপর যেমন বাড়তি চাপ পড়ছে, তেমনি অনেক গরিব পরিবারের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাঁচকৈড় বাজারের জয় পেপার হাউজের জয়দেব কুন্ডু বলেন,প্রতিটি শিক্ষা উপকরনের দাম বেড়েছে। আমরা বাড়তি দামে কিনে বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। দাম বাড়ায় বিক্রিও কমেছে বলেন জানান তিনি।
জয়দেব কুন্ডু জানান,১ ডজন বল পয়েন্ট কলমে ৮ টাকা,পেন্সিল বক্সে ২০ টাকা,ব্যবহারিক খাতা প্রতিটিতে ১৫ টাকা, ৮০ টাকার রঙ পেন্সিল ১২০ টাকা, ৬০ টাকার জ্যামেতি বক্স ১০০ টাকা,১৫ টাকার স্টিলের স্কেল বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়, ২২০ টাকার (১ রিম) দিস্তা কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়। এ-ফোর সাইজের ২০ টাকার খাতার দাম বেড়ে হয়েছে ২৫ টাকা। ১০ টাকার ইরেজার এখন ১৫ টাকা,২০ টাকার জেল পেন ২৫ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির গুরুদাসপুর উপজেলা শাখার সভাপতি মোস্তানুর রহমান রাংকু বলেন,-‘কাগজের দামের প্রভাব বই ও খাতার ওপরে পড়ছে। পাঠ্যবইসহ সব ধরনের বইয়ের দাম অন্তত ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।’
ফটোকপি ও ষ্টেশনারী দোকানি শরিফুল ইসলাম বলেন,-‘কালি ও কাগজের দাম বেড়ে যাওয়ায় ফটোকপির দাম বেড়েছে। আগে প্রতি কপি ফটোকপি করতে ১.৫০ টাকা নিতেন তিনি। তা এখন দুই টাকা,দুই পাশে তিন টাকা নিচ্ছেন।’
বই কিনতে আসা আনিসুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,‘তাকে প্রতিদিনের খাবার যোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে ছেলে মেয়েদের বাড়তি দামে বই,খাতা,কলম কিনে লেখাপড়া করাতে কষ্ট হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে লেখাপড়া বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকবে না।’
চাঁচকৈড় নাজিম উদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ(ভারপ্রাপ্ত)জালাল উদ্দিন শুক্তি বলেন, শিক্ষা উপকরণের দাম বৃদ্ধি শিক্ষার জন্য মোটেও সুখকর নয়। এতে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার বৃদ্ধি পাবে। সরকারের সবার জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হবে।
বাংলাদেশ সময়: ৪:৩১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain