১০ বছর আগে ৩ মেয়ে এক ছেলে রেখে স্বামী আব্দুল কুদ্দুস স্ত্রী আনেছা বেগমকে একা করে না ফেরার দেশে চলে যান। মেয়েরা বিয়ে হয়ে অন্যত্র সংসার করছেন। একমাত্র ছেলে বিয়ে করে পৃথক সংসার পেতেছেন। অভাব অনটনে চলছিলো আনেছার সংসার। এরইমধ্যে শীত তাঁর জন্য সুখের বার্তা নিয়ে এসেছে। শীতের পিঠা বেঁচে সংসারের অভাব ঘুচেছে আনেছার। আনেছা বেগম (৫৫) নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় খলিফা পাড়া মহল্লার বাসিন্দা।
বুধবার (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যা ৭ টার দিকে গিয়ে দেখা যায়,চাঁচকৈড়-খলিফা পাড়া প্রধান সড়কের পাশে অস্থায়ী এক চালার নিচে বসানো চৌকি। সামনে বেঞ্চ। চৌকিতে দুটি চুলা জ্বলছে। এক চুলাতে ভাপা ও অন্যটিতে চিতই পিঠার তাওয়া বসানো। আনেছা বেগম তাওয়ায় পিঠা বানাচ্ছেন প্রতিবেশী একজন লাকড়ি ঠেলে সহযোগিতা করছেন। দাঁড়িয়ে বা বসে শীতে গরম পিঠার স্বাদ নিচ্ছেন কয়েকজন ক্রেতা। অন্যরা ব্রেঞ্চে বসে পিঠা পেতে অপেক্ষায় আছেন ।
আনেছা বলেন, ‘ঢেঁকিছাঁটা চালের গুড়ার সাথে খেজুরের গুড়ের মিশ্রন দিয়ে গরম পানির ভাঁপে তৈরী হয় ভাপা পিঠা। আর চালের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে মন্ড তৈরী করে সেটি মাটির তাওয়ায় ঢাকনা দিয়ে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরী হয় চিতই পিঠা। চিতই পিঠার সঙ্গে দেয়া হয় ধনে পাতা,কালো জিরা,শরিষা বাটা,কাঁচা মরিচ ও পেয়াজ দিয়ে তৈরী ভর্তা। যা পিঠার স্বাদকে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়।
আনেছা বেগম আরো বলেন,-‘প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কেজি চালের গুড়ার পিঠা তৈরী করেন তিনি। চালের গুড়া,খেজুর গুড়,জ্বালানী,অন্যান্য উপকরন বাবদ খরচ ১ হাজার টাকা। গড়ে দৈনিক বিক্রি ১হাজার৫০০ টাকা। খরচ বাদে ৫০০ টাকার মতো আয় হয়। যা দিয়ে ছচ্ছলে চলছে তাঁর সংসার।’
পিঠা খেতে আসা যুবক মাসুদ খলিফা বলেন, ‘বাড়িতে তো সব সময় পিঠা তৈরি সম্ভব হয়না। মাঝেমধ্যে বন্ধুদের সঙ্গে পিঠা খেতে আসেন তিনি। প্রতিটি পিঠা ৫ টাকায় পাওয়া যায়।’
আনেছা বেগমের মতো উপজেলার প্রায় সব হাটবাজার ও সড়কের মোড়ে শীতের পিঠা তৈরি করে বাড়তি আয় করছেন অনেকেই। অস্থায়ী দোকানগুলো সকাল ৬টা থেকে ৯টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি চলে। রস পিঠা,ঝাল পিঠা,তেলে ভাজা পিঠা বিক্রি হলেও চিতই ও ভাপা পিঠার ক্রেতাই।
কলেজ শিক্ষক বেলাল হোসেন বলেন, ‘শীত আর পিঠা বাঙালীর ঐতিহ্যের অংশ আর ভোজন রসিক বাঙালীর অন্যতম প্রধান খাবার। কর্মব্যস্ত মানুষের পক্ষে বাড়িতে পিঠা তৈরির সময় বের করা কঠিন। এসব মানুষের জন্য শীতের পিঠা খাওয়ার উপযুক্ত স্থান পথের ধারের দোকান। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১০ নভেম্বর ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain