নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের আনন্দনগর মহল্লার কৃষক জমসেদ আলী। তিনি কৃষি বিভাগের পরামর্শে প্রথমবার ১০ কাঠা জমিতে সূর্যমুখী আবাদ করেন। সেবছর ভালো ফলন হয়নি। পরের বছর তিনি ১ বিঘায় সূর্যমুখী চাষ করে সফল হন। গতবছরের সফলতায় তিনি এবছর ৪ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন আসছে সব বয়সী মানুষ। তাদের আনন্দে কৃষকও খুশি।
বৃহস্পতিবার(১৬ মার্চ)সকালে সরোজমিনে সূর্যমুখী ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে,জমিতে ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের ক্ষেত। প্রতিটি ফুল সুর্যের হাসি হাসছে এটি যেন ফসলি জমি নয়,এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান।
ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক জমসেদ আলী (৫০) জানান,উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উৎসাহ এবং সরকারী সার,বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে তিনি সূর্যমুখী চাষ করেছেন। জমি লিজ,সেচ,নিরানী,শ্রমিক খরচসহ প্রতি বিঘায় তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আশা করছেন প্রতিবিঘায় ৮মন ফসল পাবেন। বাজারে প্রতিমন সূর্যমুখী দাম ৫ হাজার টাকা। খরচ বাদে প্রতিবিঘায় তিনি ২৫ হাজার টাকা লাভবান হবেন বলে আশা করছেন।
কৃষক আরো জানান,গত বছর তিনি সূর্যমুখীর তেল বিক্রি করে অধিক লাভবান হয়েছিলেন। ১মনে(৪০ কেজি) তিনি ১৫ কেজি তেল পেয়েছিলেন। প্রতিকেজি তেল ৫শ টাকা হিসাবে ৭ হাজার ৫০০ টাকার তেল আর ২০ কেজি খৈল ৮শ টাকা একত্রে ৮ হাজার ৩শ টাকা বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলেন। ভোজ্য তেল হিসাবে বিক্রি করলে প্রতি মণে অতিরিক্ত ৩ হাজার ৩শ টাকা লাভবান হবেন বলে আশা তাঁর।
সূর্যমুখী ফসল চাষে প্রধান সমস্যা পোকার আক্রমন,ঝড় বৃষ্টিতে গাছ হেলে পরলে ফলন বিপর্যয় ও ফসল ঘরে তোলার আগে পাখির উপদ্রব। তার পরেও অন্য ফসরের তুলনায় সূর্যমুখী চাষে খরচ কম,অধিক লাভ জেনে অন্যরা তাকে দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন।
একই মাঠের কৃষক আব্দুস সালাম জানান, সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্তের লোকজন ছুটে আসছে। বিকেল বেলায় অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসে জমির পাশে ছবি তুলেন,সময় কাটান। এসব দেখে তার খুবই আনন্দ লাগে! শুনেছি সূর্যমুখী খুবই লাভজনক একটি ফসল। আগামী বছর ওই কৃষক সূর্যমুখী চাষ করবেন বলে জানান।
গুরুদাসপুর পৌর শহরের চাঁচকৈড় শাহপাড়ার বাসিন্দা তরুন ছাত্র স¤্রাট বন্ধুদের সাথে ও পুড়ানপাড়া মহল্লার মিজানুর রহমান তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সূর্যমুখীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছিলেন। তারা জানান, মাঠ ভরা সূর্যমুখী ফুল দেখে চোখ জুড়িয়েছে তাদের। ফুলে ফুলে মৌমাছির ছুটোছুটি এক অন্যরকম অবহ তৈরী করেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ হারুনর রশীদ জানান,তেল জাতীয় ফসল উৎপাদর বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ বছর গুরুদাসপুরে ১৪ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। যার অধিকাংশই উচ্চ ফলনশীল হাইসান ৩৩ জাতের। কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা করা হচ্ছে। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দামের কারণে চাহিদা বেড়েছে পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী তেলের। এ এলাকার মাটি সূর্যমুখী চাষের উপযোগী। আর অল্প খরচে অধিক লাভের কারনে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এতে আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১:০৭ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ ২০২৩
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain