আদালতের নিষেধাজ্ঞা, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন এবং উৎকোচ নেয়া পছন্দের প্রার্থীদের ছাড়া অন্যদের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণের সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের খলিফাপাড়া রেজাউল করিম দাখিল মাদরাসা নিয়োগ কমিটির বিরুদ্ধে। শুক্রবার সুপার পদসহ অন্তত ছয়টি পদে গোপনে নিয়োগ দিতে গেলেও তোপেরমুখে স্থগিত করেছে কমিটি।
oppo_0
অনুসন্ধান বলছে,পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, বোর্ড গঠনসহ নিয়োগের সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল গোপনীয়তার সাথেই। সর্বশেষ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল ) পার্শ্ববর্তী উপজেলার আহম্মেদপুর ডিগ্রি কলেজে নিয়োগ পরীক্ষা নিতে গিয়ে স্থানীয়দের তোপের মুখে পরেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্যরা। অভিযোগ উঠেছে মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়োগদানের চেষ্টা করেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ আলী। তিনি গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক।
মাদরাসা সূত্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী ৬টি পদে নিয়োগদানের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি। ওই বিজ্ঞপ্তিতে শূণ্য পদে সুপারিনটেনডেন্ট, সহকারি সুপার, এবতেদায়ি প্রধান, পরিচ্ছন্নকর্মী এবং সৃষ্ট পদে নিরাপত্তা কর্মী ও আয়া পদে আবেদন আহবান করা হয়। এতে মোট ৪৯ জন প্রার্থী আবেদন করেন।
সুপারিনটেনডেন্ট পদ নিয়ে গুরুদাসপুরের সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন ওই প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারি তাছির উদ্দিন। ওই মামলায় ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আদালত সুপার পদে স্থিতিঅবস্থা বজায় রাখতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন।
সূত্র বলছে, এসব পদে নিয়োগ দিতে ডিজি প্রতিনিধি হিসেবে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) পরিচালক মো. জিয়াউল আহসান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সেলিম আখতার, সদস্য সচিব হিসেবে ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুর রউফ, সভাপতি হিসেবে ডা. মোহাম্মদ আলী এবং অভিভাবক প্রতিনিধি হিসেবে দেলোয়ার হোসেনকে নিয়োগ বোর্ডের জন্য মনোনীত করা হয়।
মামলার বাদি তাছির উদ্দিন বলেন, সুপার পদে নিয়োগদানের বিরুদ্ধে আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের অনৈতিক সুবিধা দিয়ে চুপিসারে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, মাদরাসা পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধেও আদালতে একটি মামলা চলমান রয়েছে। ওই মামলাতেও কমিটির বিরুদ্ধে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার।
এদিকে এসব পদে আবেদনকারী প্রার্থীর অনেককে নিয়োগ পরীক্ষায় ডাকা হয়নি। আবেদনকারীদের মধ্যে মোহসিন আলী, উজ্জল ফকির, আব্দুল মজিদ, সাইফুল ইসলাম, জুয়েল রানাসহ অন্তত ২০ জন অভিযোগ করেন, তোপেরমুখে বাতিল হওয়া ওই নিয়োগ পরিক্ষায় তারা ডাক পাননি।
মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের (প্রশিক্ষণ ও উন্নয়ন) পরিচালক মো. জিয়াউল আহসান বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি তিনি হাতে পাননি। তবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন এবং আবেদনকারীদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র না দেওয়াসহ বিভিন্ন ত্রুটির কারণে তিনি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুর রউফ বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কথা তিনি জানতেন। তবে প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে সভাপতির নির্দেশেই নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তারা।
মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সেলিম আখতার বলেন, নিরাপত্তাজণিত কারণে পাশের উপজেলায় পরীক্ষার ভেন্যু নির্বাচন করা হয়েছিল। সেখানে তারা নিয়োগ দিতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছেন।
পরিচালনা কমিটির সভাপতি ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞার কপি তিনি বা তার প্রতিষ্ঠান পাননি। তবে নিয়ম মেনেই নিয়োগ পরিক্ষার প্রস্ততি নেয়া হয়েছিলো। স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বাঁধারমুখে তা স্থগীত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৩:৩৪ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain