স্থানীয় বিশেষ প্রজাতির বাঁশ ও তাল পাতার ডগার আঁশ সমন্বয়ে তৈরী একধরনের দেশীয় ছোট মাছ ধরার ফাঁদকে চাঁই বলে। নাটোরের চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুর এলাকায় বর্ষার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পানির সাথে আসছে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় মাছ। আর মাছ ধরার উপকরণ চাঁই তৈরী ও বিক্রির ধুম পরেছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। দামে সাশ্রয়ী ও গুণগত মান ভালো হওয়ায় গুরুদাসপুরে তৈরি এসব উপকরণ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
পরিবারগুলো বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বেছে নিয়েছে এই চাঁইশিল্প। জানা গেছে, মাছ ধরার এসব উপকরণ- চাঁই,খোলসুন,দোয়াইর, ধুন্দি, বানা, খাদন, বিত্তি ও ভাইর নামে পরিচিত। বাঁশ ও তালপাতার নিচের অংশের আঁশ দিয়ে তৈরি এই চাঁই বর্ষাকালে বিভিন্ন জলাশয়ে ছোট ছোট মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়।
হাতে তৈরি এসব মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করে প্রতিটি পরিবার দিনে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন। ছোট বড় পরিবারের সকল সদস্য এই ফাঁদ তৈরির কাজে সহযোগীতা দিয়ে থাকেন। বর্ষাকালে যখন হাতে কাজ থাকেনা তখন বিশেষ করে মহিলারা পরিবারে বাড়তি আয়ের আশায় এসব ফাঁদ তৈরি করে থাকেন।
গুরুদাসপুর উপজেলার ধারাবারিষা,মশিন্দা,বিয়াঘাট ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামে বছরজুড়ে চলে মাছ ধরার ওইসব সামগ্রী তৈরির কাজ। উপজেলার ধারাবারিষা গ্রামের গৃহিনী রেখা বেগম(৪৫) জানালেন,পরিবারে বাড়তি আয় করতে তিনি নিজ হাতে চাঁই তৈরীর কাজ করেন। তার ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করে। তাদের আর্থিক সহযোগীতা করতে তিনি অবসর সময়ে মাছ ধরার উপকরন তৈরী করে থাকেন।
একই গ্রামের রেজাউল করিম বলেন,চাঁই তৈরী করতে বেশ কয়েক প্রকার উপকরন প্রয়োজন হয়। স্থানীয় ভাষায় তল্লা বাঁশ,তালের ডাকুর, দা, কান্তি এবং আঁশ ছড়ানোর জন্যে বাঁশের চুঙ্গি। তল্লাবাঁশ পরিমানমতো খন্ড খন্ড করে তা থেকে মিহি খিলের বানা তৈরী করতে হয়। ্এরআগে বিশেষ পদ্ধতিতে তালের আঁশ ছড়িয়ে খিল একটার পর একটা জুড়ে বৃহদাকার বানা তৈরী করা হয়। এরপর মাছ প্রবেশের জায়গা তৈরী করে শক্ত সুতা দিয়ে বেঁধে তৈরী করা হয় চাঁই।
সরোজমিনে মঙ্গলবার(৫জুলাই)সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার চাঁচকৈড় হাট ঘুরে দেখা গেছে,-বিক্রেতারা সাড়িবদ্ধভাবে চাঁইগুলো বিক্রির জন্য সাজিয়ে রেখেছেন। এসব চাঁয়ের ক্রেতা বর্ষা মৌসুমে কাজ না থাকা বিল পাড়ের শ্রমজীবি মানুষ। চাঁদ বিক্রেতা মশিন্দা গ্রামের খোরশেদ আলী জানান, এক জোড়া চাঁই,খোলসুন আকার ভেদে ৫’শ ৫০ থেকে ৬’শ টাকা, বৃত্তী ৪’শ টাকা, ভারই ৪’শ টাকা, ধুন্দি ৩’শ ৫০ টাকা, বানা ৪’শ টাকা, খাদন সাড়ে ৪’শ টাকা টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শুধু চাঁচকৈড় হাট নয় নয়াবাজার, ধারাবারিষা পুরাতন বাজার,নাজিরপুরসহ বড়াইগ্রাম, সিংড়া ও তাড়াশ,চাটমোহর উপজেলার বিভিন্ন হাটে এসব উপকরণ বিক্রি হচ্ছে।
রোজি মোজাম্মেল মহিলা কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী বলেন,চলনবিলে বসবাসরত নিম্ন আয়ের মানুষ হস্তচালিত এই শিল্পের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করলেও এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নেই সরকারি উদ্যোগ। এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা ব্যক্তি কিংবা এনজিও কাছ থেকে চড়াসুদে ঋণ নিয়ে কোন রকমে এ পেশাকে টিকিয়ে রেখেছেন। সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পেলে বিশাল এই জনগোষ্ঠী আর্থিকভাবে আরো লাভবান হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ৫:২৯ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ জুলাই ২০২২
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain