আব্দুল আলিমের বয়স ১৩ বছর। অভাবের সংসারে শিশু বয়সেই ধরতে হয়েছে সংসারের হাল। পিতা রাশিদুল ভ্যান চালক হলেও অসুস্থ্যতার কারনে তার রোজগারে সংসারে অভাব ছিলো নিত্য সঙ্গী। পাশর্^বতী মহিষমারী গ্রামে ঝুড়ি তৈরীর যন্ত্র দেখে ধারদেনা করে ছেলেকে একটি যন্ত্র কিনে দিয়েছেন। সেই ভ্রাম্যমান যন্ত্রে চাল দিলে বের হয় সুস্বাদু মুখরোচক ঝুড়ি। ঝুড়ি তৈরীর যন্ত্রের চাকায় ঘুরছে রাশিদুলের সংসারে চাকা। আলিম গুরুদাসপুর উপজেলার সীমন্তবর্তী বিলদহর গ্রামের বাসিন্দা।
শনিবার(২৯ জুলাই) সকাল ১১ টার দিকে গুরুদাসপুর পৌর সদরের আনন্দ নগর মহল্লায় গিয়ে দেখা গেছে,মহল্লার বউ-ঝিয়েরা চাল থেকে ঝুড়ি তৈরীর জন্য ভ্রাম্যমান যন্ত্রের সামনে অপেক্ষায় দাড়িয়ে রয়েছেন। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই সরাসরি ভাত রান্নার সেদ্ধ চাল যন্ত্রের মধ্যে ঢেলে দিলেই বের হয়ে আসে মুখরোচক ঝুড়ি। ঝুড়িতে বাড়তি স্বাদযুক্ত করতে চালের সাথে চিনিযুক্ত করলে বের হয় মিষ্টি ঝুড়ি। আর মরিচের গুড়া,পরিমানমতো লবণ আর সরিষার তেল মিশিয়ে নিলে বের হচ্ছে ঝাল ঝুড়ি। ঝুাল কিংবা মিষ্টি যাই হোকনা কেন প্রতিকেজি ঝুড়ি তৈরীতে গুনতে হয় মুজুরী ৪০ টাকা।
আলিম জানায়,তারা দুই ভাই। ট্রাক ড্রাইভারের সহকারী বড়ভাই আলিফ (২৪) বিয়ে করে আলাদা সংসার পেতেছেন। একা সামাল দেয়া কষ্টসাধ্য বিধায় আরেক শিশুকে (মামাতো ভাই) সাথে নিয়ে এসেছে। অসুস্থ্য পিতার সংসারে বাড়তি আয় যোগান দিতে এপথ বেছে নিয়েছে সে। বছরখানেক আগে ৯০ হাজার টাকায় কুষ্টিয়া থেকে যন্ত্রটি কেনা হয়।
আরো জানায়,প্রথমে হাত মাইকের সাহায্যে গৃহিনীদের ঝুড়ি তৈরীতে আকৃষ্ট করা হয়। একত্রে বেশ ক’জন সমবেত হলে যন্ত্র চালু করা হয়। শেষ হলে নতুন স্থানে গিয়ে আবার সমবেত করে একরপর এক চলে ঝুড়ি তৈরীর কাজ। ১ কেজি চালের ঝুড়ি তৈরীতে সময় লাগে ৫ থেকে ৭ মিনিট। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে আয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। যন্ত্রের জ¦ালানী (ডিজেল) ও অন্যান্য খরচ ৫০০ বাদে দৈনিক আয় ১ হাজার টাকা।
আনন্দ নগর মহল্লার গৃহিনী মারজান খাতুন জানান,সবসময় বাচ্চাদের জন্য নাস্তা তৈরী করা সম্ভব হয়না। নাস্তার ঝামেলা এড়াতেই এ ঝুড়ি তৈরী করে নেয়া। বাচ্চাসহ বাড়ির সববয়সী মানুষের পছন্দ এ ঝুড়ি। একসময় গ্রামীণ মেলা থেকে ঝুড়ি কিনে আনা হতো। সময়ের সাথে পাল্টেছে অনেক কিছুই। ওরা বাসার সামনে এসে তৈরী করে দিচ্ছে। দেখে-শুনে কোনরকম রাসায়নিক ছাড়াই স্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী করে নেয়ার সুযোগ হাতছাড়া করছিনা।
গুরুদাসপুর রোজী মোজাম্মেল অনার্স কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মাজেম আলী মলিন জানান,একসময় গায়ের মায়েরা চাল থেকে কায়েকধাপে হাতে তৈরী ঝুড়ি তৈরী করতেন। সেটা ছিলো সময় ও কষ্টসাধ্য। প্রযুক্তি অনেক কিছুই পাল্টে দিয়েছে। যন্ত্রের সাহায্যে ঝুড়ি তৈরীতে সময় ও ঝামেলা দুটোই কমেছে। আবার অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ৮:৩২ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৯ জুলাই ২০২৩
gurudaspurbarta.com | MD. Faruk Hossain